বাতাসে মশলার ঘ্রাণ- সাব্বির আহমাদ- কবিতা

বাংলা কবিতা ও কবিদের আসর খ্যাতিমান কবিদের প্রেমের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খ্যাতিমানদের জীবনবোধের কবিতা কবিতার আসর (Kobitar Ashor) কাজী নজরুল ইসলাম Bangla Kobita (বাংলা কবিতা) কবিতা ককটেল কবিতা ক্যাপশন কবিতা লেখা কবিতা আবৃত্তি কবিতা বাংলা সবচেয়ে সুন্দর কবিতা জনপ্রিয় বাংলা কবিতা কবিতা অসমীয়া জীবনবোধের কবিতা  বাংলা কবিতা, প্রেমের কবিতা, দেশের কবিতা, বাংলা গল্প বাংলা কবিতা পড়া ও লেখার ওয়েবসাইট


 জানালার বাহিরে এই ভরদুপুরে

থকিত গাছের পাতা।

এই রোদ, এই হাওয়া,

দূরের নীলাকাশে ডানা মেলা চিল

উড়ে

নিঃসঙ্গ আমার ঘরের ছায়া।

যতদূর মায়াচ্ছন্ন মশলার ঘ্রাণ ;

হেঁটে হেঁটে পাড় হই বেণুবন, তোমার

ঘরের আঙ্গিনা।

 

কে যেন ডাকছে উতলা হয়ে!

কেন এত মায়া,এত আবেগ তার স্বরে ?

হাওয়া দোল-দোল শিমুলের বনে।

বহুদূর নীলাদ্র আকশ পেড়িয়ে অচিন এক গ্রাম ;

ছায়াবীথির পথ মারিয়ে যে মশলার ঘ্রাণ

বারবার ভেসে উঠে

ছেয়ে উঠে চোখের ক্যানভাসে।

 

একটু আঁধারএকটু আলো

হরদম বাজে শিষ পাখির ঠোঁটে।

এই তিরতিরে হাওয়ার তোড়ে, খুব ধিরে

খুব ধিরে তোমার মুখ, আনত নয়ন

অঙ্কিত হয় ফুলের হৃদয়ে।

 

কিভাবে ভুলে গ্যাছ চোখ,

স্মৃতির স্তুপ ;

চাপা পড়া পুরনো কথা ?

এই দিকে জ্বলে জ্বলে আগুন

নির্বাপিত হয়

বহুত ক্লান্ত তোমার পর ছায়া।

 

যেদিকে মৃত্যুর ফাঁদ ;

খোলা মুখো উদ্বর্ত আহ্বান।

সেদিকে ছেড়ে দেওয়া শ্বাস ঘুরেফিরে

টেনে আনে পথ ; বারেবারে হেঁটে হেঁটে

নির্লজ্জ তোমার আলিঙ্গনের মায়া!

 

কেউ একজন ক্রমাগত নিয়ে যায় মুখ।

টেনে আনে আনকোরা ফুলের তোড়া।

এই সুবাস, এই হাওয়া

থেকে থেকে দাঁড়িয়ে থাকে একা-একা!

আমি বিস্মৃত

তবুও তোমার জন্য আত্মহারা।

 

এখানে দাগ নেই ;

চুমুহীন জীবনের শাদা পাতা।

বাতাসে মশলার ঘ্রাণ তবুও নুনহীন

স্বাদহীন তোমার ঠোঁটের প্রখরতা।

 

কোনো কোনো গাছে নিঃসঙ্গ হলুদ পাতা

খুব ভেবে ভেবে পর হয় ; মাটির মায়ায় পড়ে

মৃত্যুর কাছে দেয় ধরা।

ভালোবাসাতোমার উপমা!

একটা গাছ, ঝুলে থাকা অজড় পাতা।

ভালোবাসাতোমার উপমা!

একটা পাখি, উড়তে থাকা বিষণ্ণ হাওয়া।

ভালোবাসাতোমার উপমা!

একটা মানুশ, হাঁটতে হাঁটতে একদিন

ফুরায় এই দ্বিধান্বিত জীবনের সর্বমায়া।

 

একটা বাংলা গানের সুরে যখন

বেজে ওঠে তোমার মুখ।

চোখের দোলে যখন কেঁপে ওঠে

বেণুবন, রোদেলা পথ।

আমি তখন পথ হই, বাতাসে মশলার

ঘ্রাণ হই ; এক ক্রশ দূরের সেই

নির্জন গ্রাম হই ; তোমার

সুরের উদাসী মায়া হই রোজ।

 

কি ভেবে লিখে দেই নাম,

হাওয়ার পিঠে বেজে ওঠে মরমি গান।

ক্রমাগত সুর

একটা আরক্ত ফুল

দুলে ওঠে নির্জীব ছন্দে ছন্দে।

 

প্রজাপতি উড়ে যায় অন্য বনে।

ব্যাথা ভুলার কোন ওষুধ কি দিতে পারো হাত দ্যাখে ?

তিরতিরে কেঁপে ওঠে হস্তরেখা।

অস্থির হয়ে থাকে যে ফুল

তাকে দাও জলঘুম ; সান্দ্র হাওয়া

চন্দ্রমল্লিকার দেহে ধরে সেই পুরান জ্বালা।

 

এত বুঝি কথা জানো!

চোখ পড়ে বুঝে নাওচাওয়া।

কপালে হাত রেখে বলে দাও

মনের ভিতর শান্ত দুপুর ;

চুপিচুপি ঝরে পড়ে গাছের পাতা।

 

'বার উর্ধ্বে চলা পাখি!

বশ মেনে কেড়ে নেয় অজস্র মায়া।

তাও সব ভুলে গিয়ে

পথ দেখাই,

সুখ দেখাই ; অন্যের ঠিকানা।

 

আমি পড়ে থাকি একলা ঘরে।

দরজা এঁটে। মিথ্যের

মিশ্রণে কারা যেন গুনগুন করে।

একি মন্ত্র, ইন্দ্রজাল ভেদ করে

ছুটে আসা হাওয়া!

দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে যে নর্তকী

খুলে দেয়

অন্তবাস, পেটিকোট, ঝুলে থাকা স্তনের বুটা

আমি অন্ধ মেঘ হই ; কালো হাওয়া

ঢেকে দেই যত লালায়িত চোখ,

কামনার গর্ত থেকে বেয়ে পড়া

পানির ধারা।

 

বহু রুপি ফাঁদ, তবুও নকল।

তুমি ভয় দেখাও ধারালো অস্ত্রের।

যে ধ্যানে নেশা ধরে

আমি ক্রমাগত বাঁশি হই তার।

সুরের ভিতর যে আরতি তুমি নাচাও

লিখে রাখো বহু রুপি,

তোমার এই খসখসে চুমু

সঙ্গমের ঘ্রাণ। ধারালো অস্ত্রের মায়া

'সব কিছুই খাঁটি না।

 

 

কতগুলো রাত স্থির হয়ে থাকে

চোখের নিচে।

বারবার যে কালি মেখে দাও

কবিতার বুকে।

তার গতর খুলে কি কখনো

দেখতে পাও

পৃথিবীর আলপথ ধরে ক্রমাগত যে

মিছিলের সুর বেজে ওঠে,

গেয়ে ওঠে বিপ্লবী কন্ঠে কন্ঠে।

তার কতটুতু তোমার হাতের মায়া

বুকের দরদ, চোখের পানি দিয়ে লেখা ?

 

আমাদের দুঃস্বপ্ন গুলো জেগে

ওঠে বারেবারে।

রক্তের স্রোতে ভাসতে ভাসতে যে ঢেউ

কুমন্ত্রণা দেয় মনে।

আমি তার পথ আগলে ধরে

হাঁটতে হাঁটতে সজীব হই

সন্তানহারা মায়ের দীর্ঘ শ্বাসে।

তবুও তুমি শতাব্দী ধরে

বিপ্লবী হয়ে বেজে ওঠো

জেগে ওঠো

কোনো আনাড়ির ঘুমন্ত মনে।

 

কি ভেবে আঁকড়ে ধরি হাত ?

যে দৈত্যের ভয়ে তুমি অন্ধ সাজো!

আমি তার চোখ পড়ে বুঝে নেই

সান্দ্র দুপুর

পথের পিঠ জুড়ে বিছিয়ে থাকা

পাতাদের ফিসফিসে কথা।

যে হাওয়ায় কামুকের ডাক!

মাতাল কাঁকড়ি মশলার ঘ্রাণ ;

যৌনতায় যে বিকিয়ে দিয়েছে রূপ

আর ধন

তার কাছে জেনে নাও

কামের স্বাদ, ধারালো জিহ্বার মজা।

 

আগুনের পাশে বসে

যে জ্বলন তুমি জ্বালাও চুলার বুকে ;

পুড়ার মধ্যে যে তৃপ্তি আর স্বাদ

তুমি তার কি বুঝবে ?

 

হেঁটে হেঁটে আর কতদূর গ্যালে

শেষ হবে এই ভাবান্নিত আকাশের পথ ?

চারদিকের বাতাসে বাতাসে যে মশলার

ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে ; নিশ্বাসে নিশ্বাসে

তার কতটুকুই বা শেষ হবে


আরও পড়ুন- শিশির আজমের কবিতা

Powered by Blogger.