শিশির আজম এর কবিতাগুচ্ছ
রান্না করা মাংসের ঘ্রাণ
আগ্নেয়গিরির বেগুনি নীল আভা
এই ঘরে
রাত দেড়টা
পরিস্থিতি বরাবর যেমন থাকে তেমন রান্না করা মাংসের ঘ্রাণ
এখন নেই
তাহলে আসুক বিলায়েত খাঁ
দুটো কথা বলি ওর সঙ্গে
আর এই টেবিল
দেয়ালের টুকরো টুকরো অসম্মত প্রতিচ্ছায়া
ক্যান্ডেলপট
এদেরকে আমি মুঘল মিনিয়েচার থেকে
তুলে এনেছিলাম
এদের
বিষাদ কল্পনা উৎকন্ঠা
এদের নিজেদের হোক
আর আমার
আমি তো তোমার সঙ্গে শুতেই চাই
ধরো এই ভরদুপুরে দরজাবন্ধ ঘরে আমি মদ খাবো
আর তোমার সঙ্গে গল্প করবো তোমার শ্মশানের পাশে বসে
মদ তুমিও খাও
তবে তা দুই-এক চুমুক মাত্র
ওতেই তোমার হয়ে যায়
আর তুমি তো জানো মদ স্বাস্থ্যের জন্য কত ভাল
হ্যা এই দুপুরটাও অনেক ভাল
আসলে
যে কোন দুপুরকেই মদ অফার করা যায়
কারো সঙ্গে গল্প করা যায়
কারো সঙ্গে শোয়াও যায়
তবে এটা ঠিক
শুয়ে পড়ার পর মদের আর তেমন কাজ থাকে না
বোকাদের প্রেম
হাসতে হাসতে সবার সামনে
বা
নির্জন নিরালায়
বা
কোন ভনিতা না করে
প্রেম
আচমকা কতোবার এসেছে
আবার চলে গেছে
অথচ
আমি ভাবতাম প্রেম
সহজে আসে না
ভরদুপুরে এমন অরাজক কান্ড কেউ দেখেছে
এক মেয়ে একটা ইঁদুর ধরে খাচ্ছে
হেমন্তের দুপুরে
খড়ের গাদায়
আমি দেখলাম
এর আগে কখনো কোন মেয়েকে
ভরদুপুরে
আমি ইঁদুর খেতে দেখিনি
হ্যা মেয়েটা কুমারী
আর ইঁদুরটা তাজা
হাসিখুশি
কাদম্বরী
কাদম্বরী দেবী অসুখে মরলেন না আত্মহত্যা করলেন
এই প্রশ্ন রবিরে আমি করি নাই
কেন করি নাই সেই উত্তর সময়মতো আমি দিবো
আপাতত জাইনা রাখো রবি আমার বন্ধু মানুষ
রবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রিন্স দ্বারকানাথের নাতি
কবি
আর কবিরা তো ভালবাসতে জানে তোমরা জানো
কিন্তু কখন কারে কোন সিচুয়েশানে লাভিং ইমোশান শো করতে হবে
এই ক্যালকুলেশান মাইনা ভালোবাসা তো কবিদের পোষায় না
তাই না
যা হোক একসময় কবিতায় বা গল্পে কবির আর পোষায়তেছিল না
গানে বা নাটকেও না
অনেক কাঁটা অভিজ্ঞতা আর গুঞ্জনধ্বনিরে সাফার কইরা
ও পড়লো ছবির প্রেমে
ছবি আর ছবি
কলমের টানে রেখার পর রেখা বিন্দুর পর বিন্দু
মাপহীন ক্যানভাস
আর ছবিগুলাতে রং কিন্তু তেমন আছিল না
আছিল তো
কালো
কালো আর কালো
আর বিস্ময়কর ব্যাপার হইলো এই কালোর ভিত্রে
রবিরে আমরা অনেকটা পাইলাম
যেইটা ওর কবিতা কিছুটা এড়ায়া চলছিল হয় তো অথবা আপন গভীরে
স্বস্তি পাইতেছিল না
যেইটার জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুৎ আছিলাম না
আচ্ছা শান্তিনিকেতনে ফাল্গুনের এক পড়ন্ত বেলায় রামকিঙ্কর যে মনিপুরী রাজকন্যা বিনোদিনীকে
রবীন্দ্রনাথের সামনে দাঁড় করায়ছিলেন
শ্যামলাকালো ছিপছিপে টানটান চাবুকের মতো ধারালো বিনোদ
আর দূর কোপাইয়ের বাতাসে ভেসে আসছিল এস্রাজি পকড়
হ্যা ঐ বিনোদ
শালবনের বিনোদ
কোপাই পাড়ের বিনোদ
সাঁওতাল পাড়ার বিনোদ
লাল খোয়াইয়ের পথ বেয়ে উঠে এসে রবির চোখে ঠায় দাঁড়ায়গেছিল
তারপর রবির চোখ থিকা আর দশটা ঘটনার মতোই ও কি মুইছা গেছিল
মাথায় বেলফুলের মালা জড়ানো বিনোদিনী
কে জানে
হ্যা রবির অন্তর্গত সত্তার অলিম্পিয়া আমরা অনুভব করলাম
সত্তার দ্যূতি
সত্তার বিচূর্ণতা
বলো এ কি দ্যূতি বা বিচূর্ণতা না দেবী কাদম্বরী ।
আরও পড়ুন- রহিত ঘোষালের কবিতা