রহিত ঘোষাল এর কবিতা

 
রহিত ঘোষাল এর কবিতা

উপকূল

নারী ওড়ে পুরুষ ওড়ে
শ্বাস দীর্ঘ হয়
শুষে নেয় তারা এলোমেলো বায়ু 
গ্রহাণু মূহ্যমান গ্রহাণু
ওখানে আমাদের না হওয়া সংসারের নাড়িভুঁড়ি
পোষবুড়ি তৈজসপত্রের দিকে ছিন্ন দৃষ্টি দিয়ে 
বনাঞ্চল উজাড় করে—
ওখানে আছড়ে পড়ে মৃত্যুকাল ফোঁটা ফোঁটা
নাভি থেকে ওড়ে ভ্রমর—
পলকহীন তাকিয়ে থাকি ক্ষতস্থানে 



জলন্ত নোম্যান্স ল্যান্ড

১.
বন্দুকের নলের উপর ঘুঘু পাখি এসে বসে,
সে জানে শীতের বাতাসে আছে অবক্ষয়,
পবিত্র মূর্তি ভেঙে পড়ছে,
আর স্থির থাকছে না বিশ্বাস,
নব আনন্দধারা দৌড় দিলো
সমষ্টিগত স্মৃতির বিপরীতে...

২.
পাড় ভাঙে পাড় গড়ে—
বিচার বিবেচনা ঊর্ধ্বে উঠে লাফায়,
উপকূলে ভগবান চেটে খায় অদৃষ্ট,
মাংস লেগে আছে প্রেমিকার মুখে—
রক্ত মুছে  দিয়েছি কেবল,
তবু সে খাঁচায় থাকতে চায় না কেন?
ডুবন্ত দুঃখে সে শাঁখা ভাঙে,
আমিও কি থাকতে চাই জীবিকাবদ্ধ?
দমবন্ধ, উল্কা ধ্বস, ইম্প্রেশানিস্ট স্তনবৃন্ত,
মৌতাত মাখা বিনিদ্র শ্মশান,
গাঁজা ধরাই, জনশূন্য অপরাহ্ণ,
আমিও কি থাকতে চাই সম্পর্কহীন?
খেয়ানৌকা নেবে আমায়?
নদী দেখাশোনার একটা লোক তো চাই,
ভটভটি নিয়ে উপোসি ফুটন্ত জলে
সারাদিন-সারা বিকেল
আমি নাড়াচাড়া করবো শোকাহত
ছেলেহারা মায়ের দেহ,
কাদা খাবে তার কাপুরুষ,
বেওয়ারিশ লাশের ব্যবসা করে সাফল্য
পেলেই ঘরে আনবো ফর্সা বাঁদি,
টিভিতে দেখবো পেট্রল পাম্পের আগুন,
ভিতরকার লতাপাতা চাইবে ঘুমপিণ্ড,
ধাক্কা খাবে গর্ভ, কাঁচাখেকো
আমার অন্তঃপুরের দস্যুদল,
হুল্লোড় হবে দগ্ধ বুকে, পলকা সভ্যতা
আমি আসছি...


সতর্ক ও উদাস দিন 

জীবনের মহড়া চলছে,

সিঞ্চিত সকালের থুরথুরে দুনিয়া 

অফুরান ফাঁকা হৃদয়—

মরণের কণ্ঠস্বরে লেগে আছে জীর্ণ অভিযান,

রুদ্ধবাক,বিরাগ নীল বালুতীর, 

রুদ্ধশ্বাস ফাল্গুনী আঁচড়,

মৌনতা অভাষিত মৌনতা,

অনাবৃষ্টির দেউড়িতে কুঁকড়িয়ে আছে জন্মলগ্ন,

অস্পষ্ট সোপানে কুসুম কুসুম ব্যথা,

ভ্রষ্ট মানুষ পূবালী অবসাদ নিয়ে 

শুচিব্রত পালন করে যায় 


সৃষ্টি

ঘড়িকে শূন্যে দাঁড় করালে, বুঝবে—
সেখানে অস্থিরতা একীভূত হয়ে ছিল,
ক্রমাগত হিল্লোলিত তরঙ্গ
ঠিক যেখানে একই রকম
ছন্দে পৌঁছায়—
তখনই হয় মহাবিস্ফোরণ,
প্রতিবার, 'অশেষ' বুকে নিয়ে,
সৃষ্টি হয় বিপরীত মাধ্যাকর্ষণ,
দূরে ঠেলতে থাকে প্রেমিক প্রেমিকার ঠোঁট


শীতলকুচ

আদি সময়ের ফুটন্ত জল রাত রাত্রি মধ্যরাত রজনী মন আর কিছু সংযোগে ভুল সূর্যের দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকা নক্ষত্র ঠিক আছে হাওয়া ঠিক আছে ডানা ঠিক আছে খাওয়ার থালা ঠিক আছে একদম পূর্ব দিকের সমুদ্রের বালুতট ঠিক আছে পাথরে লেগে দৃষ্টি জোয়ার ভাটার মতো স্পষ্ট দিগন্তরেখা ভাগ হয়ে গেছে নাব্য পথ কতটা সামলে রেখেছ এই তিনদিনে জাল বুনে রেখেছ মাকড়সার মতো কিন্তু যে কোনো সময় ধ্বসে যেতে পারে 

এবং কিছু দিয়েও সামাল দেওয়া যাবে না পৃথিবীর শৃংখলবদ্ধ পথ থাকবে না সংযুক্ত এই অনুভূতিটাই শরীর দিয়ে যায় এক শরীর সাঁতার দিয়ে আমরা ভুলে যাই আরেক শরীরের কাছে পৌঁছানো যায় শরীর কেবল সূচনা মাত্র এবং একথা সত্য মিথ্যা যাই হোক তাকে তুমি পেছনে ফেলে দিতে পারবে না যতই দৌড়াও এক অবাক বিলম্ব হতবাক প্রতিদিন ঘটেই চলে



আরো পড়ুন- অনন্ত পৃথ্বীরাজ-এর পাঁচটি কবিতা




Powered by Blogger.