রহিত ঘোষালের কবিতা
![]() |
ঋতু চতুরতা
এই শীতের রাতের পরে
প্রবল বেদনায় নিথর দেহ
তারা ভরা ব্যাপ্ত আকাশ
হিম রক্তিম অন্ধকার পৃথিবী
এ হৃদয় এখানে আক্রান্ত
গলিত যৌবন প্রান্তে প্রস্থান
চিনেছি নিজেকে কবন্ধ
ধূ ধূ বুকের আশ্লেষ চক্রবাল
দয়িত স্বপ্নের হতাশ বিন্যাস
প্রাত্যহিক অনিশ্চয়তায়
আচ্ছাদনের নীচে পিচ্ছিল
হিংসাময় ঘুমের আভা
জগতের সব কীট পতঙ্গের চোখজ্বালা নিয়ে|
ধ্বস্ত ঋতু চতুরতা।
দীনাতিদীন জ্বালাপোড়া
গাঢ় ছায়ানীড়,
শেষকৃত্যানুষ্ঠান,
মূর্ত ঝাঁপ,
এই বহ্নিশিখা অহোরাত্র জ্বলছে—
স্মৃতিচিহ্ন, শান্তিবৃষ্টি, পূর্ণতা-প্রাপ্তি
ধূপের নিঃসঙ্গ হত্যালীলা
বিবরণ থেকে দূরে দূরকালে
এক বিগ্রহ হয়ে উঠবেই,
আমরা সেদিন অনুমতি ছাড়া অসীমে
ভেসে থাকব,
ক্ষুদ্র আকাশে, বাগান-ঘেরা সায়াহ্ন—
অভিসার টানবে পঞ্জীভূত মৃত্যু,
নিষিদ্ধ প্রেম নিঃশব্দে বাঁচিয়ে রাখে শীর্ণ
গ্রাম্য মুখ, কড়িকাঠে লেগে থাকে বটঝুরি,
জীবন কিনারে দীনাতিদীন জ্বালাপোড়ার
প্রশাখা, নষ্ট যৌনরঙ আজ লবণাক্ত জলে
যাবে, বনবাসী হবে কলঙ্ক সব,
গ্রামপতনের পর নীল মেরুদণ্ড তোমাকে দিয়ে
আমি নাম-পরিচয়হীন জাহাজে উঠে বিদায় নেব,
আরো গাঢ়তর অমৃত শুষে নিয়ে
চলে যাব মেলার মাঠে
ঝড় ও করুণা
দিনদুপুরে মরচে পড়া এই অবিমৃষ্য প্রতীক্ষা
সাজিয়ে বসে আছে কন্যার অন্তরাত্মা,
উথলে উঠছে ঢেউ—
সমুদ্রে আজ কেউ ভাসতে যাবে না,
একাকিনী তুমি নৌকা বাঁধো,
মেঘের ছায়া ঢেকেছে পাহাড় থেকে পাতাল,
স্রোতের কিনারে কিনারে তপ্ত ভয়সঙ্কুল
পরিত্রাণহীন ঝড়,
সারাদিন আজ ধর্মহীন সঙ্গম,
প্রকৃতি,
ব্যভিচার আজ শিয়রে নেচে নেচে অলিগলি
কাঁপিয়ে উপবাসী,
শ্মশানের উচ্ছিষ্ট ও সজলতা
প্রাত্যহিক উপসংহার জড়িয়ে আছ
পাথরপ্রতিমা
প্রান্তবেলা তোমাকে আমার কিছু
বলার ছিল,
কালের কোটরে যে খেলা পুনর্বাসন
দিতে পারেনি
তাকেও আমার দেওয়ার ছিল, কথামালা
ফসল ফলিয়ে খরা থেকে দিয়েছিল
পরিত্রাণ,
যে মেয়ে সবুজ পথে পাশাপাশি হেঁটেছে
তাকে বলেছিলাম শিকড়-পরিচয়,
আজ পিয়ানোর উদাসীন আভা
উদোম কানাগলিতে নির্ঘাৎ কিছু
বলতে চেয়ে ভাবুক,
সময়ের কুহর স্তব্ধ তাই বলতে চাই
আবর্তন, বলতে চাই পাথরপ্রতিমা
জাল ছিঁড়তে ছিঁড়তে
কিছুটা অবসর অন্য অবসরকে অনুকরণ করে,
আমরা তার তলায় বসবাস করি,
প্রতিদিন পারাপার করি সময়,
আরো প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে লক্ষ্য,
অকারনে এসেছে শুশ্রূষা—
যা অবশ্যই চিরকালীন নয়,
যার সাথে আমরা সংযোগ হারিয়ে ফেলবো,
সময়ের পরতে পরতে আমরা আরো
দৃঢ় হয়ে উঠি, নানান স্থানে আমরা
অন্ধের মতো ঘুরে বেড়াই,
জংলা ঘাসে ঘাসে
আমাদের বিচ্ছিন্নতা ফেলে আসি,
কোনও সাহায্য আসে না,
উদ্ধার করতে পারি না কোনওরকম অর্থ,
যোগাযোগ হয় সারাদিন পৃথিবীর সাথে,
তারপর মুখ ঘুরিয়ে চলে আসি,
মন
শরীরকে ক্রমাগত পাথর করে ফেলে,
আমরা নীচে পড়তে থাকি,
অনেক গভীরে পৌঁছে যাই,
মিথ্যে আমাদের থেকে বেশি দ্রুত
এগিয়ে যায়—
বিলম্বিত মুহূর্তের কাছে
মহুয়া প্রবাদ
এই দারুণ নিখুঁত দুঃখের পথটুকু
আমি একা হেঁটে যক্ষপুরীর কাছে
এসে নামিয়ে রাখি সংসার, পরিজন,
প্রেম, ছায়া-নগর,
ক্ষত থেকে মুখ তুলে তাকায়
জন্মনিয়ন্ত্রণ,
ঔরসে নীল আকাশ, মৃত্যুমন্ত্রে
উজ্জ্বল প্রেত,
পাড়াময় অকেজো বাতাস,
রক্তাভ ধুলো
আমায় ছুঁতে চেয়ে সীমান্তে শুকিয়ে যায়,
বর্ণনা পার করে এসেছি আমি,
নিশুতি রাতের বিজন সল্টলেকের তলিয়ে যাওয়া
দেখতে
দেখতে
ভিজে অবয়ব জ্বলজ্বল করে ওঠে,
পুড়তে থাকে মহুয়া প্রবাদ
আরও পড়ুন- শিশির আজমের কবিতা