সাঈদা আজিজ চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ



জেগে উঠুক রোমিও-জুলিয়েট 


 তাপিত প্রাণে যদি ফোটাতে পারো ফুল 
মৃদু হাওয়ায় ঝরাও সুগন্ধি বকুল 
তাহলে এসো,এলোমেলো মানুষদের এই জনপদে 
বিস্তৃত তরঙ্গ আঁচলে মুছে ফেল সব ভুল । 

এসো, মরুবালুর তপ্ত বুকে ব্রহ্মপুত্র বয়ে যাক 
কোমল ভেজা আঁচলে ঢেকে দাও 
নগরীর সীসা- কংক্রিটের দগ্ধ মুখ 
জ্যোৎস্নার পোশাক পরে জলপরী আসুক। 

স্বপ্নবাজ রমণীর চোখ,দৃষ্টিতে নক্ষত্র সংলাপ 
পারো তো এসো,ফোটাও ভালোবাসার গোলাপ।
 স্বর্গের গন্ধমাখা টকটকে গোলাপ। 

 বুকের জানালায় হল্কা বাতাস কাঁদে 
সমুদ্র-সুরে ভালোবাসার কলধ্বনি 
মৃন্ময়ী প্রেম মহাশূন্যে বেনুনি বাঁধে। 

 জোড়ায় জোড়ায় সুর নিমগ্ন পাখির ডুয়েট 
জেগে উঠুক প্রেম-বিদগ্ধ রোমিও জুলিয়েট। 

 


রক্তিম ফুল 


 এখানে মৃত্যু হাঁটে পায়ে পায়ে গায়ে গায়ে 
তবু হেমন্তের অকৃপণ সোনালি হাসি 
পূর্ণতা এনে দেয় দৃষ্টির কোণে কোণে 
সূর্য-সন্তানের হাসি এ মায়ের কোলে। 

 শিশিরের গল্প শিউলি বকুল মল্লিকার কানে 
রক্ত মুছে যায় পায়ে হাঁটা পথে পথে 
প্রজন্ম জানে না পূর্বসূরীর তিতিক্ষার ঋণ 
ধূলিকণার আস্তরণে পদচিহ্ন বিলীন। 

 চেয়ে দেখো, ঝরা পাতার বৃক্ষটি কেমন ঋজু 
আকাশের দিকে মুখ করে শাখা প্রশাখায় 
অচেনা নান্দীপাঠ একাকী বিধুর সংগীতে 
গ্রাফিতির দেয়ালে দেয়ালে স্বপ্ন থাকে গেঁথে। 

 ক্ষণিক হৃদয় কাঁপে,তারপর ঋতুর আবর্তে 
সুন্দরটুকু ধারণ করে চোখে মেখে চলতে চলতে 
শিশুর মত ভুলে থাকি সবুজের বুকে রক্তটুকু 
ঝড়ো হাওয়ায় জননীর বেদিতে রক্তিম ফুল।

 সবুজের বুকে রক্তটুকু জননীর বেদিতে রক্তিম ফুল। 




নেমে আসুক জুলকার 


বৃক্ষময় অরণ্য প্রসারিত করো ভালোবাসা 
প্রশান্তির অবিরল ধারায় ভূমিষ্ঠ হোক শ্রাবণ-শিশু 
প্লাবন শেষে সবুজ জরায়ূর কোষ ছিঁড়ে বের করো 
পলির আবরণে প্রতিহিংসাহীন মহামানব। 

বুকের ভেতর অথৈ বঙ্গোপসাগর 
 নক্ষত্র খসে পড়ে জোয়ারের জলে 
আলোর শিরস্ত্রাণ তলিয়ে যায় 
মানুষ ও প্রকৃতির রক্তাঞ্জলি ফোঁটায় ফোঁটায়। 

মিথ্যে শ্লোগান, বুলেটবিদ্ধ বুকের আগুন 
বৃক্ষময় বনস্পতি ঝরাও অনন্ত বর্ষা 
তারপর পলির অমিয় শান্ত শরীর বেয়ে 
 নেমে আসুক শক্তিধর জুলকারনাইন। 

 স্বপ্ন ছড়িয়ে দাও মাটির প্রতিটি কণায় 
অন্ধ ইডিপাসের রক্তের শিরায় 
বিস্তার করো হে বনস্পতি দিন-রাত্রির 
 তান্ত্রিক আবর্তনে প্রতিবাদ প্রতিরোধ। 




নির্বাপিত প্রেমপাত্র 


 আদিজলে ধ্রুবলোকের প্রেমকথা 
অবনত চোখে ষোড়শী আকাশ 
নীলাভ শাড়ির অসীম বিস্তার 
নক্ষত্রের আলোয় ভালোবাসার কথোপকথন 
 সোনালি ঈগলের ডানায় রুমালি প্রেম 
 রঙধনু মেঘ দ্রুত বাতাসের ঘোড়ায়। 

অনূদিত পরিভাষায় মর্ত্যলোকের প্রেম 
অঘ্রাণের নবান্নের আমন্ত্রণ,ঢেঁকুর তুলে শালিক। 
 পিঁপড়েদের খাদ্য চাই, শীতের সঞ্চয় 
সারিবদ্ধ মিছিলে তারুণ্য-উচ্ছ্বাস। 
 খেজুর রসের আরতি বাদুড়ের মহার্ঘ্য 
 পাখা মেলে স্বস্তিতে রাতের আকাশে। 

পাহাড়ী কন্যাদের বিবাহ বন্ধন সমুদ্র-মোহনায় 
পূর্ণিমার সাদা পাল্কিতে বরযাত্রী আকাশের নক্ষত্র—
মধুপূর্ণিমা উদযাপন চাঁদকে সাথে নিয়ে। 

 শিশির আর ঘাসফুল—বিয়ে হলো 
 অসীম উদারতায় সূর্যের স্বাক্ষর 
প্রতীক্ষার প্রহরে প্রজাপতি মৌফুলের বাসর। 

মানুষের হৃদয়ের আয়না দুরুদুরু বুকে 
রক্তকরবী ফোটে না দুর্নিবার কলরবে 
বকুল ঝরে না রুমালি প্রেমের নদীতীরে 
নির্বাপিত প্রেমপাত্র স্বপ্নভূক অন্ধকারে।  




Powered by Blogger.