সাব্বির আহমেদ এর কবিতাগুচ্ছ

 


গন্ধম ফল

 

এখানে কল্পনার রাত রঙ্গিন, ফুলের রঙ 

নীলাভ আর সৌরভ মেদু গন্ধা যোনির।

থুকথুক কামিনী বাতাসে কেঁপে ওঠে

বদ্ধ ঘর ; নিষিদ্ধ অত্যাচারের ক্ষোভে

পৃথিবী এখন স্বপ্নীল।

বড়বড় পাখির পালকের ওঁমে

নারীদেরস্তনের বুটার ন্যায়

কুসুম কালার গন্ধম ফল ঝুলে আছে

ঠিক সিলিংফ্যানের নিচে।

চেয়ে দ্যাখো আকাশ নেমে এসেছে

চোখের মধ্যে অদ্ভুত শিহরণে।

গলা ছিটকে আসা সুখ

বুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নাভিশ্বাস উত্তাপে।

 

হিংস্রতা আঁকতে আঁকতে তোমার দেহ

সতেজ। ফুলের টুঁটি চেপে পান করছি

যে বিষাক্ত মাদকতা

তার নেশায় তোমার কোমল ওষ্ঠ নীল।

চোখের মধ্যে কিভাবে তলিয়ে যাচ্ছে আস্তো মানুশ আর গলদেশের তিল!

সে কথা তোমাকে আদৌ জানতে দিবো না তুমি এক মৃয়মান ঘ্রাণ ; জেনে রাখো!

বাতাসে বাতাসে উড়ে ঘোর আদিমতা।

তুমি চক্ষু মেললেই রঙ ধরে ফুল ;

আর দহনে দহনে ধীরে ধীরে লাল হয়

গন্ধম ফল।

 

কি করে তোমাকে বলি যৌনতা!

অথচ প্রেমের নামে তোমাকেই শুধাই পূর্বাপর।

দুপুরের তীব্র গরমে হয় বাতাসের আরাধনা

আর সূর্য গলে পড়লে জলে ;

কামনার রঙে রঙ্গিন হয় পৃথিবীর আদিম খেলা।

কী দোষ গন্ধম ফলের ?

আর কী দোষ গাছ বা গাছের পাতার ?

আমাকে বলো

আমি বলি আদম হাওয়া নিস্পাপ আর

সব দোষ বিধাতার!

 

 

শামুক


বিবিধ অন্ধকারের ভিরে তোমাকে নিবিড় ভাবে খুঁজেছি। চৈতালি বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দের গভীরে

হাত বাড়িয়ে ধরেছি তার চিত্তক সুর।

আমাকে শুনাও গোত্রহীন শামুক! কোন অদিত্রি'

অভিমুখে হাঁটার গতি শ্লথ হয়ে আসে তোমার ?

পথে পথে যে সব গান পাখিদের কথা হয় আর

জলমগ্ন শ্যাওলা ঘ্রাণ খাবি খায় হাওয়ার দোলে

আমি সেই সব ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে পথে

অন্ধকারের রচনার বূহ্যে বারবার 

শামুক হয়ে তোমায় খুঁজেছি বহুকাল, বহুকাল

 

 

নীল মাছ


অহেতুক ভাবনার নিচে চাপা পড়ে আছে এক নিঃসীম ফাঁকা বুক। আমি এক ডাঙায় পড়া নীল মাছ। কাতরাচ্ছি ; মুখ খুলে খুলে বহু কষ্টে শুষে নিচ্ছি আয়ুর গারদ

অথচ জীবন নামক বিদূষি হাওয়া ফুরিয়ে আসছে চারদিক থেকে অথবা অর্গানিক গাছ বুঝে নিচ্ছে তাদের নিজস্ব হিসাব। আর বায়ুমন্ডল ব্যাপি ঘোর ঘোর মুমূর্ষু ঘুম ছড়িয়ে আছে কুয়াশার মতোন। অথচ মাথা ;

এক অদ্ভুত উদ্ভিদ। দিন শেষে যতই বাড়ছে উত্থিত প্রাণের গতর। আমি বলছি এক ডাঙায় পড়া কাতরানো মাছ ;

সময়ের অতলে ততই তলিয়ে যাচ্ছি আমি এবং এক ডাঙায় পড়া নীল মাছ ; অসীম অন্ধকার কূপের গহ্বরে।

 

 

রুহ লবঙ্গে বন


কথার ভিতর আর রুহ নেই।

রাতের মতন শুকিয়ে গ্যাছে ক্রন্দন।

উদোম পিঠে ভেঙ্গে পড়ছে আত্মার কোলাহল।

সারা দুপুরের দীর্ঘ ইতিহাসের পটভূমিতে

বয়ে যায় সুরেলা নদীর কল্লোল।

যন্ত্রণা নেই ; যতটুকু ছিল লুকিয়ে ফেলেছি

বিহৎ লবঙ্গের বনে। আলো

প্রতিকৃত রঙ ছেড়ে মজ্জায় ডুবে যাচ্ছে সম্ভ্রম।

কথার ভিতর আর রুহ নেই, রুহ নেই

আদিম সম্পর্কের। চোখের ভিতর গুঁজে দিচ্ছি

নগ্ন হাত। বাঁচাও বাঁচাও বলে চারিদিকে চিৎকার।

রুহ নেই, রুহ নেই আমাদের ফসিল দেহের। 



আরো পড়ুন- শিশির আজমের কবিতা

Powered by Blogger.